অনলাইন একাউন্ট এর সুরক্ষার জন্য যা যা করা উচিত

ইন্টারনেটের পরিসর বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিটি ইউজারের অনলাইন একাউন্টের সংখ্যা। সেই সাথে ইন্টারনেটে বৃদ্ধি পাচ্ছে হ্যাকারদের সংখ্যা। অনলাইন একাউন্ট হ্যাক হচ্ছে এরকম খবর তো প্রায়ই পাওয়া যায়। কার একাউন্ট কখন হ্যাক হবে সেটার নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও একাউন্ট হ্যাক হবে না এরকম শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব না তার পরেও আমরা চাইলেই আমাদের একাউন্ট এর সিকিউরিটি শক্তিশালী করে হ্যাক হওয়ার সম্ভবনা অনেক কমিয়ে আনতে পারি। তো এই আর্টিকেল এ আমি একাউন্ট সিকিউর রাখার কিছু দরকারি টিপস নিয়ে আলোচনা করবো, বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ রইলো।


Security Guide For Online Accounts 


একাউন্ট কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন সেটা জানার আগে জানা যাক কেনো আপনার একাউন্ট হ্যাক হতে পারে।


হ্যাকার কেনো আপনার একাউন্ট হ্যাক করবে?

দেখা যাবে অনেকে কমেন্ট করে বলবে হ্যাকার কেনো আমার একাউন্ট টার্গেট করবে, আমি কি কোনো সেলিব্রেটেড মানুষ নাকি?। তাহলে তাদের উদ্দেশ্যে বলি গোপনীয়তা সবারই আছে। আর হ্যাকাররা যে সবসময় কারো একাউন্টকে টার্গেট করে কাজ করে তা কিন্তু না, তারা র্যান্ডম অ্যাটাকও দিয়ে থাকে। এতে যার অ্যাকাউন্টই হ্যাক হোক না কেনো তার একাউন্ট থেকে সব ডাটা চুরি করে ঐ ডাটা থেকে তারা ভিক্টিম এর দুর্বলতা সমুহ খুজে বের করে। এরপর সেই দুর্বলতাকে অস্ত্র হিসেবে ইউজ করে তাকে ব্লাকমেইল করার মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে।


আশা করি এতক্ষণ এ নিশ্চই বুঝে গেছেন হ্যাকার কেনো আপনার একাউন্ট হ্যাক করতে পারে, এবার তাহলে একাউন্ট হ্যাক করা ঠেকাতে কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।


শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা

একাউন্ট হ্যাক করা ঠেকাতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল  তো  দেখা যায় একেক জন ইউজারের 25-30 টি করে অনলাইন একাউন্ট, আমি অন্য কারুর কথা বলবো না যেখানে আমারই 22 টি অনলাইন একাউন্ট।  এতগুলো একাউন্টের পাসওয়ার্ড মনে রাখার ভয়ে অনেকেই সিম্পল মানের পাসওয়ার্ড ইউজ করে থাকেন। যারা সিম্পল মানের পাসওয়ার্ড ইউজ করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি সিম্পল মানের পাসওয়ার্ড ইউজ মানের বাদ দিন। পাসওয়ার্ড যত বড় এবং শক্তিশালী হবে একাউন্ট হ্যাক হতে তত বেশি সময় লাগবে। তাই একাউন্ট এর সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা অনেক জরুরী। এবার জেনে নিন কিভাবে একটি কমপ্লেক্স পাসওয়ার্ড নির্বাচন করবেন এবং সেটা মনে রাখবেন।


  • শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এর প্রথম শর্ত হলো যতটা সম্ভব বড় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। কেননা পাসওয়ার্ড যতো বড় হবে সেটা ক্রাক করতে সময় ততটাই বেশি লাগবে, বুঝতেই তো পারছেন কোথায় 8 ক্যারেক্টার এর পাসওয়ার্ড এর কোথায় 17-18 ক্যারেক্টার এর।
  • ক্যাপিটাল লেটার স্মল লেটার এবং নাম্বার মিশ্রিত করে ইউজ করুণ, এতে করে পাসওয়ার্ড এর শক্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে।
  • পাসওয়ার্ডের মধ্যে কিছু স্পেশাল ক্যারেক্টার (" ' - _ + = & ; : * # ¥ § $ € £ ইত্যাদি) ইউজ করুণ।
  • পাসওয়ার্ড লম্বা হলে মনে রাখা কঠিন হয়ে যায় তাই পাসওয়ার্ডের ক্যারেক্টার গুলোর মধ্যে এমনভাবে মিল রাখুন যাতে সহজেই মনে রাখা যায়।
  • আমরা স্বভাবতই একটি এলোমেলো ওয়ার্ডের থেকে একটি বড় বাক্য সহজেই মনে রাখতে পারি, তাই লম্বা পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে আপনার মনে থাকবে এমন একটি পূর্ণ বাক্য ইউজ করতে পারেন।
  • প্রযুক্তির এই চরম সময়ে আপনার সবগুলো একাউন্টের পাসওয়ার্ড মেমরাইজ করার জন্য একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজারই যথেষ্ট। ডিভাইসে অথবা ব্রাউজারে জাস্ট পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ইনস্টল করে একাউন্ট করলেই হয়ে গেল। তবে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার এর ক্ষেত্রে অবশ্যই পাসওয়ার্ড ম্যানেজার একাউন্ট এ স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।


প্রতিটি একাউন্ট এ ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

অনেকে দেখা যায় আলাদা আলাদা একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড মনে রাখার ভয়ে সব একাউন্ট এ একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। আপনি যদি সিকিউর থাকতেই চান তাহলে এটা নিঃসন্দেহে একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এতে করে হ্যাকার আপনার একটি একাউন্ট হ্যাক করেই সবগুলো একাউন্ট এর অ্যাকসেস নিতে সক্ষম। তবে যদি মনে রাখতে অসুবিধাই হয় তাহলে খুব বেশি হলে আপনি সবগুলো একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড এর মধ্যে একটি মিল রাখতে পারেন যেটার মাধ্যমে পরবর্তীতে সহজেই সব একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড মনে করতে পারবেন।


আনকমন ইউজারনেম ব্যবহার করা

হ্যাকার যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে র্যান্ডম অ্যাটাক দিয়ে থাকে তাই আনকমন টাইপের ইউজারনেম ব্যবহার করে একাউন্ট এ অ্যাটাক আসার সম্ভাবনা অনেক কমানো সম্ভব। এছাড়া যেসব ওয়েবসাইট বা অ্যাপ এর ইউজারনেম অন্যরা সরাসরি জানতে পারে না সেসব ক্ষেত্রে ইউজারনেম গোপন রেখে হ্যাক হওয়ার সম্ভবনা কমাতে পারেন।


টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখা

গুগল, ফেসবুক কিংবা টুইটার এর মত জনপ্রিয় সার্ভিসগুলোর একাউন্ট সিকিউরিটি বৃদ্ধির জন্য টু স্টেপ ভেরিফিকেশন এর সুবিধা দিয়ে থাকে। এতে পাসওয়ার্ড ক্র্যাক হলেও পরে সেকেন্ড স্টেপ এ এসএমএস কিংবা ইমেইল এর মাধ্যমে লগইন কোড দিয়ে ভেরিফাই করতে হয়। ফলে একাউন্ট এর সিকিউরিটি অনেক অংশে বৃদ্ধি পায়। তাই যেসব ওয়েবসাইট টু স্টেপ ভেরিফিকেশন এর সুবিধা দিয়ে থাকে সেসব ওয়েবসাইট এ টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখা উচিত।


ভিপিএন ব্যবহার করা

অনেক সময় আপনি যখন লগইন পেজে লগইন ইনফরমেশন ইনপুট করেন তখন কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি সেটার উপর নজরদারি করার মাধ্যমে আপনার লগইন ইনফরমেশন জেনে নেয়। এই অবস্থায় কোথাও লগইন করার সময় বিশেষ করে আনসিকিউর প্রটোকল এর ওয়েবসাইটগুলোতে লগইন করার সময় ম্যান ইন দ্যা মিডিল অ্যাটাক থেকে বাচার জন্য অবশ্যই ভিপিএন কানেক্ট রাখবেন, এতে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি আপনার কাজের মধ্যে নজরদারি করতে পারবে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post